বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অবদানের প্রতীক হিসাবে ভাস্কর্য অপরাজেয় বাংলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্বরে প্রতিষ্ঠিত, মুক্তিযুক্ত ভিত্তিক একটি ভাস্কর্য। ৬ ফুট উঁচু একটি বেদীর উপর ভাস্কর্যটি অবস্থিত। মূল ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১২ ফুট, প্রস্থ ৮ ফুট এবং ব্যাস ৬ ফুট।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে এই ভাস্কর্যটির পরিকল্পনা করেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালেদ এবং উদ্যোক্তা ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক ম.হামিদ । ভাস্কর্যটি ফুটিয়ে তোলার জন্য মাঝে অবস্থানকারী মডেল হিসেবে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের প্রতিকৃতিতে সৈয়দ হামিদ মাকসুদ এবং আর্ট কলেজের ছাত্র বদরুল আলম। যিনি একজন সহকারী হিসেবেও ভাস্কর্য নির্মাণের কাজে সহযোগিতা করেছেন । উল্লেখ্য ফাষ্ট এইড বক্স কাঁধে ঝোলানো হাসিনা আখতারের ছবি নিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছিলো।
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এর প্রথমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে তিন ফুট উচ্চতা সম্পন্ন ভাস্কর্যের মডেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং নির্মাণ ব্যয় বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা ধরা হয়। এই ব্যয়ের অর্ধেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করতে সম্মত হয় এবং বাকি টাকা ডাকসু সংগ্রহ করার দায়িত্ব নেয়। সার্বিক ভাবে এই প্রশংসনীয় কাজ তদারক ও সম্পন্ন করার জন্য ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক ম.হামিদ, শিক্ষক কে. এম. সাদউদ্দিন ও ডঃ.বেলায়েত হোসেনকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায ।
১৯৭৮ সালে 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট' নির্মাণ কাজটি আবার চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং এগারো সদস্যের একটি নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন উদ্যোমে ১৯৭৯ সালের জানুয়ারী মাসে কাজ শুরু হয়। এই সময় ফাষ্ট এইড বক্স কাঁধে ঝোলানো হাসিনা আখতারের মূর্তিটি ভেঙে যাওয়ার কারণে, ম.হামিদের সহধর্মিনী ফাল্গুনী হামিদ ভাস্কর্য নির্মাণ স্থলে দাঁড়িয়ে মডেলের ভূমিকায় অংশ নেন। ১৯৭৯ সালে ১৬ই ডিসেম্বর এক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আনুষ্ঠানিক ভাবে 'অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন ।
প্রায় সাড়ে সতের ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্য নির্মাণে সিমেন্ট , বালু , পাথরকুচি, ষ্টীল, রড নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতি চার ইঞ্চি পুরু ঢালাই কর্মের মাধ্যমে ধাপে ধাপে ১২ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মূল ভাস্কর্যটি তৈরী হয়েছে ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে (ভাষা-আন্দোলন, আয়ুব-বিরোধী আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফা নিয়ে আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীনতা আন্দোলন) ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অবদানের প্রতীক হিসাবে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। এর মূলভাবটি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক। এই ভাস্কর্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তিন জন যোদ্ধা। এর মাঝখানে রয়েছে একজন গ্রাম্য যুবক। যার বাম হাতে রয়েছে একটি হাত গ্রেনেড এবং ডান হাতে তিনি রাইফেল বেল্ট ধরে আছেন। বামদিকে রাইফেল হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র এবং ডান দিকে রয়েছে সেবার প্রতিক এক নারী, যার কাঁধে ঝুলছে একটি ফার্স্ট এইড বক্স ।
No comments:
Post a Comment