Tuesday, December 13, 2016

মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সেরা পাঁচ চলচ্চিত্র




বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়ে আসছে। এ দেশের সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি বড় অংশ জুড়ে আছে এই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রগুলো। এ চলচ্চিত্রগুলোর অনেকগুলোতে যেমন সরাসরি যুদ্ধের ভয়াবহতা উঠে এসেছে। যেমন: ওরা ১১ জন (১৯৭২), সংগ্রাম (১৯৭৩), একাত্তরের যীশু (১৯৯৩), হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড (১৯৯৭)। সেই সাথে কিছু চলচ্চিত্রে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধকে উপস্থাপন না করে পরোক্ষভাবে এর ভয়াবহতাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপস্থাপন করা হয়েছে যুদ্ধের স্বীকার হওয়া শরণার্থী বা পালিয়ে বেড়ানো মানুষের জীবনাবেগকে। এধরনের চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে, মুক্তির গান (১৯৯৫), শ্যামল ছায়া(২০০৩), খেলাঘর (২০০৬)। এছাড়াও কিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে যুদ্ধ পূর্বকালীন ও যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে এর প্রভাব ও রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতা নিয়ে। এধরনের চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে, জীবন থেকে নেওয়া (১৯৭১), এখনো অনেক রাত (১৯৯৭), মেঘের অনেক রং (১৯৭৬), আলোর মিছিল (১৯৭৪)। উল্লেখ্য যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মার্কিন চলচ্চিত্রকার লিয়ার লেভিন জয় বাঙলা নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মার্ণের কাজ শুরু করেছিলেন কিন্তু তা শেষ করতে পারেন নি।
ওরা ১১ জন
ওরা ১১ জন ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র [২]। ১৯৭১ এ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত, স্বাধীনতায়োত্তর প্রথম চলচ্চিত্র। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতার ডাক দেন, এই ছবির গল্পে সেই ঐতিহাসিক ভাষনের কিছু অংশ দেখানো হয়েছে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন বিখ্যাত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। এ ছবিতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অভিনয় করেছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল ও নান্টু। এছাড়াও ছবির প্রধান চরিত্র গুলোতে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, হাসান ইমাম, আলতাফ, মুরাদ, নান্টু ,বেবী, আবু, খলিলউল্লাহ খান সহ আরও অনেকে।
একাত্তরের যীশু
একাত্তরের যীশু ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র[১]। লেখক শাহরিয়ার কবির-এর লেখা একাত্তরের যীশু (উপন্যাস)[২]অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেছেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। ছবির প্রধান প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ুন ফরীদি, জহির উদ্দিন পিয়াল, আবুল খায়ের, আনওয়ার ফারুক, কামাল বায়েজীদ ও শহীদুজ্জামান সেলিম। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইব্রাহিম বিদ্যুৎ, শতদল বড়ুয়া বিলু, সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল, ফারুক আহমেদ, ইউসুফ খসরু, দেলোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে।
মুক্তির গান
মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধের উপর একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণের অভিপ্রায়ে এদেশের একদল সাংস্কৃতিক কর্মীর সঙ্গ নেন। 'বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা' নামের দলের এই সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা ও শরনার্থীদের দেশাত্মবোধক ও সংগ্রামী গান শুনিয়ে উজ্জীবিত করতেন। এই শিল্পীদের সাথে থেকে লেভিন প্রায় ২০ ঘণ্টার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। যুদ্ধের শেষ দিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তিনি ডকুমেন্টারি তৈরি করতে পারেননি।
দীর্ঘ দুই দশক পর ১৯৯০ সালে তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ নিউইয়র্কে লেভিনের কাছ থেকে এই ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তারা আরো বিভিন্ন উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের নানা সংরক্ষিত উপাদান সংগ্রহ করেন, বিশ বছর আগের সেই শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ করেন। লেভিনের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফুটেজের সাথে সংগৃহীত অন্যান্য উপাদান যোগ করে ছবিটি নির্মিত হয়।

জীবন থেকে নেওয়া
জীবন থেকে নেয়া একটি বাংলা চলচ্চিত্র। জহির রায়হান এর নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭০ সালের এপ্রিল মুক্তি পায়। সামাজিক এই চলচ্চিত্রে তৎকালীন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী সামাদ , খান আতাউর রহমান, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেন, প্রমুখ। এই ছবিতে আমার সোনার বাংলা গানটি চিত্রায়িত হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এটি জহির রায়হান নির্মিত শেষ কাহিনী চিত্র।
আলোর মিছিল
আলোর মিছিল , এটি ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা ছবিটি পরিচালনা করেছেন। ছবিটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারুক, ববিতা, রাজ্জাক, সুজাতা। অভিনেতা ফারুক এর এটি প্রথম ছবি এবং এই ছবিতে অভিনয় করেই ববিতা প্রথম জাতিয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন।

No comments:

Post a Comment